– লুৎফুন নাহার লতা
একদম অপরিপক্ব বয়সের উৎসাহ নিয়ে একটা একাউন্ট খোলা থেকে শুরু করে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ রক্ষার্থে ফেসবুকের সাথে যুক্ত থাকা, প্রায় সকল বয়সের সকল স্তরের মানুষের জন্যই এখন ‘ফেসবুক’ শব্দটি আমাদের দৈনন্দিন অভিধানের অংশবিশেষ। নিত্যনতুন চিত্রপটটা একে ছাড়া কল্পনা করা অনেকের কাছে দুঃসাধ্যও বটে। বাংলাদেশে অন্য যেকোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের তুলনায় ফেসবুকের জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। ব্যবহারকারীর সংখ্যার দিক থেকেও এর অবস্থান শীর্ষে। সেজন্যই ব্যক্তি জীবনের পাশাপাশি ফেসবুকে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন অত্যন্ত জরুরী একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শুরুতেই নিজের একাউন্টের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেওয়া। কেননা কোনো একটি ছোট্ট অসাবধানতার কারণেই একাউন্টটি হ্যাক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই শুধু পাসওয়ার্ডটিকে যথাসম্ভব সুরক্ষিত করা ছাড়াও আরও বেশ কিছু দিকে লক্ষ্য রাখা গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে নিজের ফেসবুক একাউন্টটি ইমেইল আইডি দিয়ে খুলে থাকলে সেই ইমেইল আইডিটি যাতে আর কারো কাছে না থেকে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। অন্য সব কাজের জন্য আলাদা কোনো ইমেইল আইডি ব্যবহার করতে হবে। কারণ ইমেইল আইডি হ্যাক করে ফেসবুক একাউন্টটি হ্যাক করাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। আর সবশেষে ইমেইল আইডিটি ফেসবুকে যাতে শুধুমাত্র নিজে ছাড়া আর কারো দেখার সুযোগ না থাকে তাও নিশ্চিত করা একান্ত জরুরী। একইভাবে কোনো মোবাইল নাম্বার দিয়ে ফেসবুক একাউন্টটি খুলে থাকলে তার ক্ষেত্রেও একই পদক্ষেপ নেওয়া। তবে ইমেইল আইডি দিয়ে একাউন্টটি খোলা তুলনামূলকভাবে সহজ এবং একই সাথে নিরাপদ।
ফেসবুকে ‘টু স্টেপ ভেরিফিকেশন’ স্বয়ংক্রিয় রাখলে অ্যাকাউন্টটি সুরক্ষিত করার আরেকটি পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এক্ষেত্রে আমাদের অ্যাকাউন্টে আমরা ছাড়া অযাচিত কোন ব্যক্তি লগইন করার চেষ্টা করলে ফেইসবুক নিজে থেকেই আমাদেরকে সতর্ক করে দেয়।
ফেসবুকের সবচাইতে আকর্ষণীয় দিকটিই এর ব্যবহারকারীদের জন্য সবচাইতে হুমকিস্বরূপ হতে পারে। যেকোনো সময় যেকোনো ব্যক্তি আমাদের শেয়ার করা তথ্যের খোঁজ রাখতে পারেন। সেজন্য দৈনন্দিন কার্যকলাপগুলো ফেসবুকে শেয়ার করার আগে সুষ্ঠু পর্যালোচনা করে নেওয়া। প্রয়োজনে বিরত থাকা। পরবর্তী দিনে আমাদের অবস্থান কোথায় হতে পারে তা যথাসম্ভব গোপন রাখারও চেষ্টা করতে হবে।
একজনের একাউন্ট থেকে তথ্য এবং ছবি সংগ্রহ করে অনেকেই ফেক একাউন্ট খুলে থাকেন। এতে আমাদের পরিচিতি যেমন ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে তেমনি একইভাবে অনিশ্চিত যেকোনো অসুবিধার আশঙ্কাও থেকে যায়। তাই একাউন্টটি লক করতে না পারলেও ব্যক্তিগত ছবিগুলোতে যাতে যথাযথ প্রাইভেসি দিয়ে রাখা যায় এবং যতটা সম্ভব নিজের নিরাপত্তার ব্যাপারটি নিশ্চিত করা যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
বর্তমানের সার্বক্ষণিক ভার্চুয়াল নজরদারি থেকে ‘প্রাইভেসি’ বা ‘ব্যক্তিগত’ আখ্যা দিয়ে কোনো তথ্য সুরক্ষিত করা সত্যিই দুষ্কর। তবুও আক্ষরিক অর্থে আমাদের নিজেদের নিরাপত্তার ব্যাপারটিকে আসলে আমাদেরকেই নিশ্চিত করতে হবে, দিনশেষে আমাদেরকেই নিজস্ব গণ্ডিটুকু সুনিশ্চিত করতে হবে।