Skip to content Skip to footer

ভার্চুয়াল জগতে র‍্যানসমওয়্যার কেন আতঙ্কের নাম!

ভাইরাস, ওয়ার্ম বা ম্যালওয়ার হচ্ছে কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের কাছে একরকম আতঙ্কের নাম। এগুলোর সাথে কম-বেশি আমরা সবাই পরিচিত। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে র‍্যানসমওয়্যার (Ransomware) নামক ম্যালওয়্যারটি সাধারণ ব্যবহারকারী থেকে শুরু করে কম্পিউটার বিশেষজ্ঞদেরও চিন্তার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে।

র‍্যানসমওয়্যার কী?

ধরুন আপনি আপনার বাসার প্রতিটি দরজায় তালা লাগিয়ে চাবি সাথে নিয়ে শপিং করতে গেলেন। এসে দেখলেন কারা যেন আপনার বাসার সব দরজার তালা ভেঙ্গে নিজেদের কিছু তালা দিয়ে সব দরজা লক করে রেখেছে। এবং তারা দাবি করছে, তাদেরকে অর্থ প্রদান করে তাদের থেকে ওই তালাগুলোর চাবি নিতে হবে৷ তবেই আপনি তালা খুলে বাসার ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন। বিষয়টা অদ্ভুত মনে হচ্ছে, তাই না? হ্যাঁ, র‌্যানসমওয়্যার ঠিক এরকমই একটি ম্যালওয়্যার ভাইরাস।

র‍্যানসমওয়্যার (Ransomware) এমন এক ধরনের ম্যালওয়্যার ভাইরাস, যা আপনার কম্পিউটার ডিভাইসকে আক্রমন করে কম্পিউটারের হার্ড ড্রাইভে থাকা আপনার সবগুলো ফাইলকে এনক্রিপ্ট অর্থাৎ লক করে দিবে। এই এনক্রিপশন মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে, Symetric Encription এবং Asymetric Encription। 

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ম্যালওয়্যারটি আপনার কম্পিউটারের সকল ফাইলকে এত বড় কী (Key) দিয়ে লক করে ফেলবে যে, তা প্রযুক্তিগতভাবে আনলক করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। এতে করে আপনি আর আপনার সেই ফাইলগুলোতে প্রবেশ করতে পারবেন না।

বর্তমানে যেহেতু ডাটা বা তথ্য প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনিস, তাই হ্যাকাররা এই সুযোগটাই কাজে লাগিয়ে আপনার কাছে মুক্তিপণ দাবি করে। ‘Ransome’ এর অর্থ হলো মুক্তিপণ। তাই অনেক সংস্থা বা ব্যক্তি তাদের মূল্যবান ডাটা বা তথ্য ফিরে পেতে হ্যাকারদের মুক্তিপণ দিতে বাধ্য হয়। যদিও মুক্তিপণ দেবার পরও আপনি আপনার ফাইলগুলোতে পূনরায় প্রবেশ করতে পারবেন কিনা, তা নিশ্চিত নয়। এবং তারা যেহেতু এই মুক্তিপণগুলো বিটকয়েনের মাধ্যমে নিয়ে থাকে, তাই কে বা কারা এর নেপথ্যে রয়েছে, সেটাও অনুমান করা যায় না।

র‍্যানসমওয়্যার (Ransomware) এর ইতিহাস:

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানী জনভন নিউম্যান ১৯৪৯ সালে সর্বপ্রথম কম্পিউটার ভাইরাসের উদ্ভাবন করেন। তবে র‍্যানসমওয়্যার ভাইরাসের সূচনা হয় ১৯৮৯ সালে। জোসেফ পোপ নামক এক ব্যক্তি ‘AIDS’ নামক একটি ট্রোজোন র‍্যানসমওয়্যার তৈরি করেন। যেটি PC Cyborg নামেও পরিচিত ছিল। সেই সময়ে র‌্যানসমওয়্যারটি কোনো কম্পিউটারে রান হওয়ার পর হার্ড ড্রাইভের সকল ফাইন এনক্রিপ্ট করতো এবং দাবি করতো যে, ডিভাইসের কোনো একটি সফটওয়্যারের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তাই ডিভাইসের সিস্টেম আনলক করতে হলে PC Cyborg কর্তৃপক্ষকে ১৮৯ মার্কিন ডলার প্রেরণ করতে হবে। সেই থেকে শুরু, ধীরে ধীরে এটি প্রকট আকার ধারণ করে। ২০১০ সালে ভিন্ন ধরনের এক র‌্যানসমওয়্যারের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছিল। এটি কম্পিউটার সিস্টেমের প্রবেশ্যতা সীমাবদ্ধ করে দিত এবং অশ্লীল ছবি দেখিয়ে ব্যবহারকারীর কাছে ১০ মার্কিন ডলার দাবি করা হতো৷ শুধুমাত্র এটির দ্বারাই রাশিয়া ও তার প্রতিবেশী দেশসমূহে অনেক ব্যবহারকারীর কম্পিউটারে আক্রমণ করে ১৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হাতিয়ে নিয়েছিল।

র‌্যানসমওয়্যার থেকে পরিত্রাণ পায়নি বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিশিষ্ট অ্যাপেলের ম্যাক অপারেটিং সিস্টেম। ২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো হ্যাকররা র‌্যানসমওয়্যার আক্রমণ করে ম্যাক অপারেটিং সিস্টেমে। এই ঘটনার পর অ্যাপেলের সফটওয়্যার নিরাপত্তা কর্মীরা দল বেঁধে সমস্যার সমাধানে নেমে পড়ে। পরে খুব দ্রুতই তারা তাদের অপারেটিং সিস্টেমে নতুন আপডেট যুক্ত করেন, যার নাম এক্সপ্রোটেক্ট (XProtect)।

র‍্যানসমওয়্যার কীভাবে কাজ করে?

পূর্বে র‍্যানসমওয়্যার গুলোর আক্রমণের ধরন ছিল ভিন্ন। আপনি কোনো সফটওয়্যার ইচ্ছাকৃত বা ভুলবশত আপনার সিস্টেমে ইন্সটল করলে অথবা কোনো ওয়েবসাইট ভিজিট করার সময়ে হ্যাকাররা কোনো টুলস ব্যবহার করে অটোমেটিক আপনার সিস্টেমে কোনো সফটওয়্যার ইন্সটল করার মাধ্যমে আক্রমণ করতো। কিন্তু ২০১৭ সাল থেকে হ্যাকাররা তাদের এই ম্যালওয়্যারকে আরো, শক্তিশালী করে তোলে। বর্তমানে তারা আপনাকে শুধুমাত্র একটি মেইল ওপেন করার মাধ্যমেই আপনার কম্পিউটারকে নিজেদের আয়ত্বে নিয়ে নিতে পারে। অর্থাৎ তারা আপনার মেইলে কোনো লিংক বা এটাচ ফাইল সেন্ড করার পর আপনি সেই মেইল ওপেন করে কেনো লিংক বা এটাচ ফাইলে ক্লিক করার পরই কম্পিউটার আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।

ধীরে ধীরে হ্যাকাররা আপনার হার্ড ড্রাইভের একে একে সব ফাইল একটি বড় কী (Key) দিয়ে এনক্রিপ্ট করতে থাকবে৷ অর্থাৎ ফাইলগুলো লক করে দিবে যা একমাত্র ওই হ্যাকাররা ব্যতীত আর অন্য কোনো থার্ডপার্টি সফটওয়্যার বা এন্টিম্যালওয়্যার দ্বারা সেই ফাইলগুলো খোলা সম্ভব না৷ এভাবে সবগুলো ফাইল এনক্রিপ্ট হয়ে গেলে তারা ব্যবহারকারীদের নিকট নোটিফিকেশন পাঠিয়ে অর্থ দাবী করে৷

র‍্যানসমওয়্যার থেকে কীভাবে সুরক্ষিত থাকবেন?

দিন দিন হ্যাকাররা র‌্যানসমওয়্যারকে অনেক শক্তিশালী করে তুলছে৷ তবে আমরা চাইলেই একটু সচেতনতার মাধ্যমে এই ম্যালওয়্যার থেকে নিজেদের কম্পিউটার এবং আমাদের তথ্যগুলোকে সুরক্ষিত রাখতে পারি।

১. র‍্যানসমওয়্যার থেকে সুরক্ষা পেতে এখন পর্যন্ত নির্ভরযোগ্য কোনো উপায় পাওয়া যায়নি৷ অতএব নিজেদের তথ্যসমূহকে সুরক্ষিত রাখার সবচেয়ে উত্তম পন্থা হলো, গুরুত্বপূর্ণ ফাইলগুলো আলাদা কোনো স্টোরেজে ব্যাকআপ রাখা।

২. আপনার কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম সবসময় আপডেট রাখুন। আপনি যদি উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে আপনাকে আরো বেশি সতর্ক থাকতে হবে। কারণ র‍্যানসমওয়্যার সবচেয়ে বেশি উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমেই (৮৫%) আক্রমণ করে থাকে এবং WannaCry এটিকে টার্গেট করেই তৈরি করা হয়েছে। আপনি যদি উইন্ডোজ এক্সপি/৭/৮ ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে সম্ভব হলে দ্রুত উইন্ডোজ ১০ ভার্সনটি চালু করে নিন। এটি র‍্যানসমওয়্যারকে আটকাতে তুলনামূলক বেশ কার্যকরী।

৩. আপনি যদি লিন্যাক্স অপারেটিং সিস্টেমের ইউজার হয়ে থাকেন তবে আপনার ঝুঁকি তুলনামূলক অনেকটাই কম। তারপরও সবসময় আপডেট রাখুম এবং আপনার কম্পিউটারে ভালো কোনো পেইড এন্টিভাইরাস ইনস্টল করুন।

৪. অপরিচিত কোনো সোর্স থেকে মেইল আসলে সেই মেইলটি সর্তকতার সাথে ওপেন করবেন। কোনো লিংক বা এটাচ ফাইল থাকলে ভুলেও ক্লিক করতে যাবেন না৷ আগে এন্টিভাইরাস দ্বারা স্ক্যান করে নিন৷ কারণ ৬৭% কম্পিউটারে র‍্যানসমওয়্যার প্রবেশ করে এই স্প্যাম/ফিসিং মেইলের মাধ্যমেই।

৫. চুরি করা সফটওয়্যারগুলোতে ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে। তাই পাইরেটেড কোনো সফটওয়্যার ব্যবহার করবেন না। কোনো সফটওয়্যার ইন্সটল করার প্রয়োজন হলে সফটওয়্যারের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা ভেরিভাইড ওয়েবসাইট ছাড়া অন্য কোনো মাধ্যম থেকে কোনো সফটওয়্যার আপনার কম্পিউটারে ইন্সটল করবেন না।

সর্বোপরি র‍্যানসমওয়্যার সম্বন্ধে ব্যাপক সচেতনতা এবং নিরাপত্তামুলক পদক্ষেপই পারে এই বিরাট সমস্যার বিস্তার এবং হয়রানি রোধ করতে।

 

 

Sign Up to Our Newsletter

Be the first to know the latest updates

Whoops, you're not connected to Mailchimp. You need to enter a valid Mailchimp API key.

This Pop-up Is Included in the Theme
Best Choice for Creatives
Purchase Now